• শনিবার ২৯ জুন ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

  • || ২১ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

দ্রুত লবণাক্ত পানি অপসারণের দাবি

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২৪  

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিঠাপানির জলাশয় থেকে দ্রুত লবণাক্ত পানি অপসারণের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হানার পর থেকে প্রায় ৫০ ঘণ্টা অবস্থান করেছে। এতে বাঁধ উপচে লোকালয়ে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। যা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই লবণপানি অপসারণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। শনিবার (১ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল পরবর্তী খাদ্য নিরাপত্তা : আশু করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। বাপা’র সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রসুলের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা। আলোচনা অংশ নেন বাপার জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, সহ-সভাপতি মুহদুল হক খান এবং যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার ও যুগ্ম সম্পাদক মো. নুর আলম শেখ।

মূল প্রবন্ধে গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ওই বাঁধগুলি মেরামত করতে হবে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনগণের মালিকানায় বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে নীতি ও কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ভিআইপিদের চলাচল সীমিত করতে হবে। প্রশাসন ত্রাণ কাজে মনোনিবেশ না করে প্রটোকলে তাদের সময় দিতে হয়, ফলে ত্রাণ কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ত্রাণ নিয়ে ফটোসেশন মানবাধিকারের সাথে যায় না, এধরণের প্রবনতা পরিহার বাঞ্ছনীয়।’

ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকার বাস্তবচিত্র তুলে ধরে মো. নূর আলম শেখ বলেন, ‘সুন্দরবন বুক পেতে যদি আমাদের রক্ষা না করতো তাহলে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি আরো বেশি হতো। সুন্দরবন আমাদের রক্ষা করছে; সুন্দরবনকে রক্ষা করবে কে? সুন্দরবনের উপর যদি মানুষ অত্যাচার না করে তাহলে সুন্দরবন নিজ থেকেই এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস করি। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রভাবে উপকূলে সুপেয় পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আগামীতে আমন ধান চাষ, পাট ও শাক সবজি চাষে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। উপকূলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই উপকূলের দুর্যোগ কবলিত মানুষের পাশে থেকে খাদ্য ও গৃহ নির্মাণের সহায়তায় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে।’

অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, আইলার চেয়েও রিমালের ক্ষয়ক্ষতি অতি ভয়াবহ, যা আস্তে আস্তে প্রত্যক্ষ হচ্ছে। ঝড়ে মানুষের ঘর-বাড়ী, গবাদিপশু, সুন্দরবন ও সুন্দরবনের পশু ও জীববৈচিত্র্যের অপুরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সেখানকার অনেক স্থানের পানি এখনো নেমে যায়নি। ফলে সুপেয় পানির অভাব ও গবাদি পশুর জীবননাশের ঝুঁকি রয়েছে। এসকল সমস্যা সমাধানের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন। বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম বলেন, দেশে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সংকেত সংখ্যা বেশি থাকায় সাধারণ মানুষের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। সংকেত সহজ করা হলে এধরনের দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমে যাবে। অন্য কোনো দেশে এতো বেশি সিগনাল ব্যবস্থা নেই। হুঁশিয়ারি সংকেত, বিপদ সংকেত ও মহাবিপদ সংকেত, এই ৩ ধরনের সংকেত রাখার দাবি জানান তিনি।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর সরকার ক্ষয়ক্ষতির ঠিকমতো হিসাবও রাখে না। উপকূলীয় জেলাগুলোতে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেন্টার চালু নেই। খাদ্য সংকটের মোকাবেলা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে আরো কয়েকটি সাইক্লোনের আশংকা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি দুর্যোগ মোকাবেলায় যথেষ্ট খাদ্য ও প্রয়োজনীয় উপকরণ উপকূলীয় জেলাগুলোতে মজুদ রাখার দাবি জানান।