• মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

  • || ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমি মারা যাব: প্রধানমন্ত্রী

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২৪  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে মারা যাবেন।  কাজেই তিনি যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়েন সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে কিন্তু আমাকে আর গুলি-বোমা লাগবে না, এমনিতেই শেষ হয়ে যাব। কাজেই এরাই আমার প্রাণশক্তি।

এটুকু মনে রাখতে হবে।’ বুধবার (২৬ জুন) এসএসএফের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে আয়োজিত দরবারে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় আমি নিশ্চয়ই বলব, আমরা রাজনীতি করি। আমার আর কোনো শক্তি নেই। শক্তি একমাত্র জনগণ। সেই জনগণের শক্তি নিয়েই আমি চলি।’  প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই জনবিচ্ছিন্ন যাতে না হয়ে যাই, আমি জানি এটা কঠিন দায়িত্ব। তার পরও এদিকেও নজর রাখতে হবে যে এই মানুষগুলোর জন্যই তো রাজনীতি করি। মানুষকে নিয়েই তো পথ চলা। আর যাদের নিয়েই দেশের মানুষের কাজ করি তাদের থেকে যেন কোনো মতে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাই।’ বাঙালি জাতি যাতে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসএসএফের প্রতিটি সদস্য সার্বক্ষণিক সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশংসনীয় কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে আসছেন এবং বাংলাদেশে আগত বিদেশিরাও তাঁদের নিরাপত্তা প্রদানের প্রশংসা করেছেন।

সরকারপ্রধান তাঁর সরকারের বেকারত্বের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামে-গঞ্জে হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষ ও হতদরিদ্রদের সাহায্য প্রদান, গৃহহীণ-ভূমিহীন মানুষকে বিনা মূল্যে ঘরবাড়ি প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে হতদারিদ্র্যের হার ২৫.৫ থেকে ৫.৬ শতাংশে এবং দারিদ্র্যের হার ৪১ শতাংশের বেশি থেকে ১৮.৭ শতাংশে নামিয়ে আনার সাফল্য তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্যের হার ভবিষ্যতে আরো কমিয়ে আনার এবং অতিদারিদ্র্য একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। এরই মধ্যে কভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা না এলে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় দারিদ্র্যের হার আরো কমিয়ে আনা সম্ভব হতো।

তাঁর সরকারের আমলে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ঘরে ঘরে বিদ্যুত্ পৌঁছে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ আমার নিঃশ্বাস আছে, আমার এটাই চেষ্টা যে বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে যেন আরো উন্নত সমৃদ্ধ করে যেতে পারি। বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে আমাদেরও সেভাবেই চলতে হবে।’ গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে বারবার বেঁচে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছেন তাঁদের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে হয়তো একটা কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন ততক্ষণ আমি বেঁচে থাকব। কিন্তু আমার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেন এবং যাঁরা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত, তাঁদের জন্য আমি চিন্তায় থাকি। কারণ, যতবার আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে প্রতিবারই আমার কিছু না কিছু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। তাঁরা ‘মানববর্ম’ রচনা করে আমাকে গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা করেছেন। কাজেই এসএসএফ যেহেতু আমার সবচেয়ে কাছে থাকে, আমি সব সময় তাদের নিয়ে আমি চিন্তিত।’ 

কাজেই তিনি যখন নামাজ পড়েন তখন পরিবারের সদস্য, দেশবাসী এবং তাঁর আশপাশে যাঁরা থাকেন এবং নিরাপত্তায় এসএসএফসহ যাঁরা নিয়োজিত থাকেন তাঁদের জন্যও দোয়া করেন বলেও জানান। প্রধানমন্ত্রী এসএসএফের সব সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া আশীর্বাদ জানিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও পেশাগত মান বিচারে এই বাহিনী হয়ে উঠুক একটি আদর্শ নিরাপত্তা বাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।