• মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

  • || ২৪ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

যৌতুক চাওয়ায় কনের আত্মহ*ত্যা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৪  

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। পরের দিন দুপুরে বিয়ে। আত্মীয়-স্বজনরা আসতে শুরু করেছে। এরই মাঝে ঘটল মর্মান্তিক এক ঘটনা। অনুষ্ঠানের কয়েক ঘণ্টা আগে কনে আত্মহত্যা করেন। লিখে রেখে গেছেন একটি চিরকুট। চট্টগ্রামের পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেল এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে।

এদিন সিরাজ গাজী তালুকদারের বাড়িতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেন ২০ বছর বয়সী রিমা আকতার। এ সময় ঘরের দরজা বন্ধ পেয়ে ডাকতে থাকে রিমার পরিবারের সদস্যরা। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ভাঙে তারা। ভেতরে গিয়ে তারা রিমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে। রিমাকে তখনই উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৫টার দিকে মারা যান রিমা। নিহত রিমা পটিয়া সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। জানা যায়, এদিন রাতেই রিমার গায়ে হলুদ এবং শুক্রবার দুপুরে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। রিমার হবু স্বামী মিজানুর রহমান মোরশেদ একজন ব্যাংকার।

তিনি আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংকে কর্মরত আছেন। তারা দুজনই একই এলাকার বাসিন্দা। তাদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে সম্পর্কই শেষ পর্যন্ত গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। কিন্তু যৌতুকের জন্য অকালেই বলি হতে হলো রিমাকে। রিমার পরিবার জানায়, দুদিন আগেও রিমার কৃষক বাবা মনির আহমদ নগদ দুই লাখ টাকা দিয়েছিলেন বর মোরশেদের পরিবারকে। তার পরও ফার্নিচার নিয়ে চলছিল দুই পক্ষের মধ্যে নানা হিসাব-নিকাশ। এ নিয়ে কয়েক দিন ধরে রিমাকে ফোনে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে আসছিলেন মোরশেদ। সেই অপমানে রিমা রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন।

এদিকে আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখে রেখে গেছেন রিমা। সেখানে লেখা আছে, ‘প্রিয় শখের পুরুষ, তুমি করো তোমার বিয়ে। অনেক ভালোবেসেছি এবং অতিরিক্ত যন্ত্রণাও দিয়েছো। আমি পারছি না, এত যন্ত্রণা নিতে। বাকি জীবনটা সুন্দর করে উপভোগ করতে পারলাম না। ভালো থেকো, আজকের দিনেও তোমার যন্ত্রণা আমি নিতে পারছি না। আমার পরিবার থেকে যে যৌতুকের টাকা তোমাদের দিয়েছে সেগুলো শোধ করে দিও। তুমি আমাকে বাঁচতে দিলে না, আমি বাঁচতে পারতাম যদি আমি বেশি মান-সম্মান ওয়ালা পরিবারে জন্মগ্রহণ না করতাম। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর আমার পোস্ট মর্টেম করে আমার সব যন্ত্রণা ধুয়ে মুছে আমাকে কবরে পাঠিয়ো।’

চিরকুটের শেষে রিমা আরো লিখেছেন, ‘আর আমার পরিবারকে বলছি, মোরশেদকে তোমরা ছাড়বে না। ওকে ওর প্রাপ্য শাস্তি তোমরা দিবা।’ রিমার ছোট চাচা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘তিন বছর ধরে একই এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলের সঙ্গে রিমার প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। আমরা পারিবারিকভাবেই শুক্রবার বিয়ের তারিখ ঠিক করি। অনুষ্ঠান উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে রিমা ও মোরশেদ মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বলছিল। এরপর ঘরের দরজা বন্ধ করে রিমা আত্মহত্যা করে।’ নিহত রিমার ভাই আজগর হোসেন বলেন, ‘বিয়েতে বরযাত্রীর খাওয়া-দাওয়া বাবদ মোরশেদের পরিবারকে নগদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তার পরও আমার বোনের কাছে যৌতুক হিসেবে ফার্নিচার, টিভি, ফ্রিজ ও বিয়ের খরচ হিসেবে আরো নগদ টাকা দাবি করে।

উভয়ের প্রেমের সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও যৌতুক দাবি করার অপমান সইতে না পেরে আমার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তারা যে এতটা যৌতুক লোভী হবে আমরা জানতাম। নিজের প্রাণ দিয়ে আমার বোন তাদের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়ে গেছেন। মৃত্যুর আগে সে সুইসাইড নোটে নানা কথা লিখে রেখে গেছেন।’ রিমার লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। শুক্রবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। পটিয়া থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, হাইদগাঁও এলাকায় এক তরুণীর আত্মহত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। কিন্তু লাশ পাওয়া যায়নি। তার লাশটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।