• শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ২২ ১৪৩১

  • || ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে দুদকের অভিযান

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২৪  

দুদক জানায়, সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ‘ছাগলকাণ্ডে’ আলোচিত সাদিক অ্যাগ্রোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সাভারে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

সোমবার দুপুরে ওই খামারে ৯ সদস্যের একটি দল অভিযান চালায় বলে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান। অভিযানে খামারটি থেকে বিভিন্ন তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ করা হয়েছে। জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই মাসে কোভিডের বিধি-নিষেধের মধ্যে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়ে টার্কিশ এয়ারলাইন্সে আসা নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু। শাহিওয়াল গরুর নাম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গরুগুলো আমদানি করেছিল সাদিক অ্যাগ্রো। গরু আমদানির জন্য সাদিক অ্যাগ্রো গবাদিপশু আমদানি-সংক্রান্ত একটি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাণী কোয়ারেন্টাইন বিভাগের কাছ থেকে একটি চিঠি এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে গবাদিপশু আমদানির অনুমতিপত্র জমা দিয়েছিল।

যার প্রতিটি ডকুমেন্টসকেই জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন শুল্ক কর্মকর্তারা। সে সময় গরু আমদানির বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন। দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “২০২১ সালে অবৈধভাবে ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি করে সাদিক অ্যাগ্রো। সেগুলো পরিচর্যার জন্য কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হলেও গত এপ্রিলে রমজান মাসে কয়েকটি শর্ত দিয়ে গরুগুলো জবাই করে বিক্রির দায়িত্ব নেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান হোসেন। “কিন্তু এবার কোরবানির ঈদে একই রকমের গরু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায় সাদিক অ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে। তাই সাদিক অ্যাগ্রোকে দেওয়া ব্রাহমা গরুগুলো জবাই না করে প্রদর্শন করে বিক্রি করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, এছাড়া ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীতে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের গরু উঠিয়েছিল সাদিক অ্যাগ্রো। এ সব গরু কোথা থেকে আসল, সেই তথ্যের খোঁজও করা হচ্ছে। পাশাপাশি সাদিক অ্যাগ্রোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত কী না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া চলতি বছরের শুরুতে কোন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে ১৫টি ব্রাহমা জাতের গরু সাদিক অ্যাগ্রোকে দেওয়া হয়েছে, সেটিসহ অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নিয়েছে দুদক। এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, সাদিক অ্যাগ্রোর কর্ণধার ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে দেশে নিষিদ্ধ গরু আমদানিসহ কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে জব্দ থাকা ব্রাহমা গরুগুলো প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিজের আয়ত্বে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। “গত রমজানে এসব গরুর মাংস ২৮০ টাকা মূল্যে বিক্রি করার শর্তে ইমরানকে দেওয়া হয়েছিল। তবে ইমরান সুলভ মূল্যে বিক্রি না করে গরুগুলো তার খামারেই রেখে দেন।”

এ ছাড়াও নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে সংগ্রহ করে ইমরান কোটি টাকা দাম হাঁকিয়ে বাজারে তোলে বলে জানান দুদকের সহকারী এই পরিচালক। দুদকের অভিযানের পর দুগ্ধ খামারের পরিচালক ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতায় বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথির ফটোকপি করে নিয়ে গেছেন। কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার পরে সাভারের ভাকুর্তায় সাদেক এগ্রোর খামারেও অভিযান চালায় গুরুত্বপূর্ণ দুদকের দল। ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সাদিক অ্যাগ্রোর ব্যবসা সম্পর্কিত নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়। তাতে সাদিক অ্যাগ্রোকে নিয়মবহির্ভূত সহায়তার কিছু তথ্য মিলেছে।

এ বিষয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, ভাকুর্তার খামারে একটি শেডে তিনটি ব্রাহমা জাতের গাভী ও সাতটি বাছুরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসময় কাপড় দিয়ে ঘিরে রাখা একটি ছোট কক্ষে ১৫ লাখ টাকা দামের আলোচিত সেই ছাগলটিরও দেখা মিলে। সেখানে পাওয়া কিছু নথির খাতা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু ব্রাহামা জাতের গরু আমদানি ও উৎপাদন নিষিদ্ধ সেহেতু এই গরুগুলোর ব্যাপারে আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাব এবং সেই মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। ভাকুর্তার ফার্মের দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক জাহিদ খান বলেন, এই খামারে গাভী ও বাছুর মিলিয়ে প্রায় আড়াইশ গরু রয়েছে। এছাড়া ১২টি উট ও দুটি ঘোড়াসহ কয়েকশ হাস-মুরগি রয়েছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানের শেষ দিন শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রোর পুরো খামার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রামচন্দ্রপুর খাল উদ্ধারে এই উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সাদিক অ্যাগ্রোর পুরো খামার গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ট্রেড লাইসেন্স না থাকা, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা এবং খালের পাড় ঘেঁষে স্থাপনা গড়ার নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়।