• শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ২২ ১৪৩১

  • || ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

গ্রামবাসীকে খাওয়ালেন মারফত আলী!

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২৪  

প্রথা চালু আছে কেউ মারা গেলে চল্লিশ দিন পরে চল্লিশার আয়োজন করে জানাজায় শরীক হওয়া মুসল্লি ও দরিদ্র অসহায় আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে ডালভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে কেউ কেউ। এতে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায়। কিন্তু সোমবার (১ জুলাই) এর ব্যতিক্রম ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামে।

বৃদ্ধ মারফত আলী (৭০) মারা যাওয়ার আগেই অগ্রিম চল্লিশার আয়োজন করে প্রায় এক হাজার গ্রামবাসীতে গরু-খাসি ছাড়াও পায়েশ খাইয়েছেন। এমন ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
খবর পেয়ে ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, মৃত উসন আলীর ছেলে মারফত আলী দুই বিয়ে করে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছেন। দুই সংসারে রয়েছে ৩ মেয়ে ও ৬ ছেলে। এলাকায় বিত্তশালী কৃষক হিসাবে ব্যাপক পরিচিত।

মারফত আলী জানান, তিনি বর্তমানে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। নামাজ বন্দিগি ছাড়া এখন তেমন কোনো কাজকর্ম করেন না। মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা কেউ বিয়ে করে আলাদা আবার কেউবা লেখাপড়া করছেন।

যার যার মতোই ব্যস্ত থাকে। এ অবস্থায় চিন্তাভাবনা করছেন নিজের জমিজমা ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে দেবেন। এরপর অপেক্ষা পরপারে চলে যাওয়ার অপেক্ষা। এর মধ্যে মাথায় আসে তিনি মারা গেলে সন্তানরা যদি চল্লিশা না করে। এই জন্য তিনি নিজ সিদ্ধান্তেই নিজের চল্লিশা জীবিত অবস্থাতেই করে যেতে মনস্থির করেন।

পরে ঘটনাটি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তাদের সম্মতিতেই আয়োজন করা হয় মেহমানি বা চল্লিশা। এই জন্য তিনি বেশ কয়েকদিন হাতে সময় নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে গ্রামের লোকজনকে দাওয়াত দেন। গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকেই বাড়ির ভেতরে  খাওয়ানো হয় কমপক্ষে এক হাজার নারী-পুরুষকে। মারফত আলী জানান, এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু, ২০ হাজার টাকার খাসি, মুরগি ছাড়াও রয়েছে পায়েশ। 

বাবুর্চি নজরুল ইসলাম তার দলবল নিয়ে ভোর থেকেই রান্না করতে শুরু করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় বৃষ্টির মধ্যেও গ্রামের দাওয়াতি লোকজন মারফত আলীর বাড়িতে ছুটে চলছেন। দাওয়াতি আব্দুল কদ্দুস, রাশিদ মিয়া জানান, এই রকম দাওয়াত তারা অনেক দিন পরে গেছেন। তবে জীবিত ব্যক্তি নিজের চল্লিশার আয়োজন করেছেন তা ব্যতিক্রম ঘটনা। তৃপ্তি সহকারে তারা খেয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মারফত আলীর ছেলে সুজন মিয়া (৩২) জানান, তার বাবার ইচ্ছা তিনি জীবিত থেকেই এ মেহমানদারী করবেন। তাই তাদেরও সম্মতি ছিল। তবে বাবা না থাকলেও তারা বাবার আত্মার শান্তির জন্য এটা করতেন। মেয়ে রেনুয়ারা বলেন, বাবার একটা সন্দেহ দূর করতেই এ আয়োজনে সবার সম্মতি ছিল। এতে তাদেরও ভালো লাগছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় মসজিদের ইমাম মওলানা আবুল কাশেম জানান, মারা যাওয়ার পর চল্লিশার আয়োজন এভাবে করার কোনো নিয়ম নেই। গরিব ও অসহায়দের আপ্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু জীবিত থেকে ব্যাপক দাওয়াত দিয়ে যে কাণ্ড মারফত আলী করেছেন তা সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী।