• শনিবার ০৬ জুলাই ২০২৪ ||

  • আষাঢ় ২২ ১৪৩১

  • || ২৮ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৫

পানি বেড়ে আবার বন্যার শঙ্কা

মানিকগঞ্জ বার্তা

প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২৪  

ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তৃতীয় দফা বন্যার মুখে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। রংপুর ও কুড়িগ্রামেও একই অবস্থা। সব জেলার নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকা এরই মধ্যে প্লাবিত হওয়ায় প্রশাসন আবার বন্যা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সিলেট : জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নতুন করে তিন পয়েন্টসহ সিলেটে এখন চার পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার, জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি ৩৫ সেন্টিমিটার, অমলসীদে কুশিয়ারার পানি ২৮ মিলিমিটার এবং আগে থেকেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে চলা ফেঞ্চুগঞ্জে একই নদীর পানি কিছুটা বেড়ে বিপৎসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া বাকি সাত পয়েন্টেও নদীর পানি আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে।
জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৫৬.৪ মিলিমিটার।

এর মধ্যে শেষ তিন ঘণ্টাতেই ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতেও ভারি বর্ষণ হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট আইএমডির তথ্য মতে, চেরাপুঞ্জিতে গতকাল সকাল ৯টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৩১৩ মিলিমিটার। তার চেয়ে শঙ্কার বিষয় গতকাল সকাল থেকে আজ বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৯৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।

তাই সিলেটেও ফের বন্যার শঙ্কা তীব্র হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার এবং জৈন্তাপুরে সারি নদীর পানি বিপত্সীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগে থেকেই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলা ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি আরো বেড়ে বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কানাইঘাটে গতকাল সকাল থেকেই লোভা নদীর পানি দ্রুত বাড়তে থাকে, বিকেলে তা বিপত্সীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে গত দুই দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি ভাঙন দিয়ে তীব্র গতিতে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যন্ত জনপদ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন বলেন, ‘৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে এবং পরিস্থিতির অবনতি হলে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
জৈন্তাপুর উপজেলায় সারি ও বড় নয়াগং, রাংপানি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষ।

গোয়াইনঘাটে সকাল থেকে তিন ঘণ্টায় সারি নদীর পানি এক মিটার বেড়েছে। দ্রুত পানি বাড়ায় উপজেলাবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করার পাশাপাশি উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঝিসহ ৪৭টি নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম।

সুনামগঞ্জ : জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে জানায়, রবিবার রাত থেকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ভারতের মেঘালয়ে ৩১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মেঘালয়ে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেই সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা দেখা দেয়। এই পানি মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি থেকে সুনামগঞ্জ আসতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লাগে। একই সময়ে সুনামগঞ্জেও প্রায় ১৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর ফলে সুনামগঞ্জে রবিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীতে পানি বেড়েছে ৬৩ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপরে। একই নদীতে ছাতক পয়েন্টে পানি বেড়েছে ৫১ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপরে। এ ছাড়া যাদুকাটা নদী বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, মেঘালয়ের ভারি বর্ষণের সঙ্গে সুনামগঞ্জেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তাই বন্যা হতে পারে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘বন্যার আশঙ্কায় আমরা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছি। বন্যা মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে।’

রংপুর : উজান থেকে আসা ঢলে রংপুরে তিস্তার পানি বেড়েছে। পানি বাড়তে থাকায় শেখ হাসিনা সেতু রক্ষা বাঁধের ব্লক ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।
গতকাল সকালে দেখা যায়, বাড়িঘরে পানি উঠেছে। মানুষ নৌকায় করে ঘরের জিনিসপত্র ও গবাদি পশু সরিয়ে নিচ্ছে। উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট, ইচলির চর, শংকরদহ চর, কোলকোন্দ ইউনিয়নের পূর্ব বিনবিনা, নোহালীর চরের প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি।
নিজেদের ও গবাদি পশুর খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছে নদীপারের মানুষ। বিশুদ্ধ পানিরও সংকট। তলিয়ে গেছে প্রায় দেড় শ হেক্টর জমির ফসল।

ইউপি সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম জানান, পূর্ব বিনবিনার চর এলাকার বসবাস প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। এসব মানুষ কষ্টে জীবন যাপন করছে।